প্রয়াত হলেন প্রদীপ চৌধুরী। হাংরি আন্দোলনের পুরোধা এই কবি তাত্ত্বিক ভাবে কবিতাকে বুঝতে চেয়েছিলেন। শিক্ষিত ও মুখরোচক শব্দের প্রতি তাঁর কোনো আনুগত্য নেই। নান্দনিকতার অজুহাতে কবিতায় যা কিছু বর্জন করা হয়, তাদেরই নিজের কবিতায় স্থান করে দিতে চেয়েছেন। লিখছেন রাহুল দাশগুপ্ত ... ...
পবিত্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন ষাটের দশকের শেষে আমদের পক্ষে এক হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা, যাঁর সঙ্গে মিশতে শুরু করলে কবিতার অতলে না তলিয়ে গিয়ে আর উপায় নেই। তিনি যে কবিতা লেখার পাশাপাশি অবিরত প্রবন্ধ লিখেছেন তা খানিকটা তিরিশের দশকের বুদ্ধদেব ও সুধীন দত্তদের ভ্রমণসূচির কথা মনে রেখেই। তিনি চেয়েছিলেন ‘কবিতা’ পত্রিকার মতো, ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার মতো তাঁর সম্পাদিত ‘কবিপত্র’ হয়ে উঠবে সফল ও অসফল, খ্যাত ও অখ্যাত নানা কবির আবাসস্থল। স্মৃতিচারণে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ... ...
ইব্লিসের আত্মদর্শন। ছয় দশক আগে প্রথম প্রকাশে বাংলা কবিতামহলকে চমকিত করেছিল। সার্থক দীর্ঘ কবিতার অনেক উদাহরণ বাংলা কবিতায় থাকলেও সে কবিতাটি তার প্রকরণগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই এখনও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক৷ আমরা ইব্লিসের পাঠকরা এই কবিতায় মহাকাব্যিক সেই প্রবণতার সন্ধান পাই যা আধুনিক উপন্যাসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য৷ লিখছেন রাজীব সিংহ ... ...
তিনদিন পরেই প্রয়াত হলেন রমানাথ রায়। গভীর, শাণিত ও তির্যক তাঁর সৃষ্ট গল্প ও উপন্যাস। তথাকথিত বাস্তবতা ও ফ্যান্টাসির ভেদরেখাও লঙ্ঘিত হয় প্রায়শ। সহমর্মিতা তাঁর সাহিত্যের বড়ো সম্পদ। ১৯৬৬। ‘এই দশক’ পত্রিকা প্রকাশ দিয়ে শুরু হয় ‘শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন’। ছিলেন তার প্রথম পাঁচ পদাতিকের একজন। লিখছেন আকৈশোর বন্ধু ও এ আন্দোলনের সহস্রষ্টা শেখর বসু ... ...
গোগা। একটা গল্প। যা আসলে একটা আশ্চর্য উপন্যাস শুরু হওয়ার (অথবা শুরু না-হওয়ার) ঘোষণামাত্র। ইস্তেহার। প্যামফ্লেট। শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলনের মুখপত্র ‘এই দশক’ পত্রিকায় প্রকাশিত ১৯৭০ সালে। রচনা— রমানাথ রায়। নিবিড়পাঠে কবি ও গল্পকার সুদীপ বসু ... ...
কাহিনি, চরিত্র কিংবা স্থান-কাল-পাত্রের পরম্পরা, এসব বাদ দিয়ে গল্পকে করে তুলতে চেয়েছিলেন গল্পকারের স্বাধীন বিচরণক্ষেত্র। গোষ্ঠীবদ্ধ সাহিত্য আন্দোলনগুলি সময়ের নিয়মে যখন থেমে গেছে, গভীরতর অন্বেষণে রমানাথ রায় চলে গেছেন রূপান্তরের পথে। লিখছেন শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন-বিষয়ে গবেষক সৌম্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ... ...
সুধীর চক্রবর্তী। প্রয়াত হলেন সম্প্রতি। অনন্য প্রাবন্ধিক। অসাধারণ বাগ্মী। তেমনই ছিলেন একজন চিরায়ত শিক্ষক, যে শিক্ষক স্নেহপ্রবণ, যে শিক্ষকের আশীর্বাদমুদ্রা সতত তাঁর ছাত্রদের মাথার উপরে। বিবিধ বিষয়ে তাঁর গভীর গবেষণা। প্রেম, প্রকৃতি, মানুষ ও ঈশ্বর সম্পর্কিত যে বোধগুলি লোকধর্মগুলি নুড়িপাথরের মতো পড়েছিল, সুধীরবাবু তর্জনী নির্দেশে দেখালেন, এই দ্যাখো, এগুলো রত্ন। লিখছেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী ... ...
পঁয়ষট্টি বছর ধরে যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয় আর ষাট বছর জুড়ে যার সঙ্গে প্রতিদিনের নিবিড়তম সখ্য, প্রায় পঞ্চাশ বছর বিদেশবাসের দূরত্ব সত্ত্বেও যার সঙ্গে সংযোগ থেকে গেছে প্রায় প্রাত্যহিক সম্পর্কের মতো, তার আকস্মিক এই প্রয়াণ কী বিমূঢ়তায় রেখে গেছে আমাকে, আশা করি পাঠকমাত্রেই সেটা অনুমান করতে পারবেন। এই সময়টায় আমার পক্ষে নীরব থাকাও যেমন শক্ত, তেমনই কঠিন কিছু বলাও। তবু সম্পাদকের আগ্রহের কাছে পরাভূত হয়ে কোনোমতে এই সামান্য-কটি কথা লিখতে হলো। পাঠকেরা আমাকে যেন মার্জনা করেন। ... ...
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। কেবল সুকবি নন, মহৎ কবি। গভীর খেদ এই যে, বাংলা সাহিত্যের বৃহত্তর পাঠকসমাজ এবং গ্রন্থপ্রকাশকরা মধ্যমানের পক্ষেই তাঁদের রায় দেওয়ায় তাঁর লেখার কপালে যে উপেক্ষা জুটল, তা অবমাননার নামান্তর। লিখছেন কবি গৌতম বসু ... ...
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। কেমন ভাবে পাঠ করব আমরা তাঁর কবিতা? সে কবিতা একদিকে যেমন ভুবনায়নের কাউন্টার কালচার তৈরি করছে, তেমনই নিজে হয়ে উঠছে বিশ্বের মাইক্রোকজম। ‘কবিদের সমস্ত জায়গায় একটা সমান্তরাল এবং আদিগন্ত রাখিবন্ধনের ব্যাপার আছে। সেই জায়গাতে আমাকে শনাক্ত করার কাজটা কিন্তু তোমাদেরই করতে হবে,’ এমনই ছিল কবির নিজের অভিপ্রায়। লিখছেন হিন্দোল ভট্টাচার্য ... ...
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। সংকীর্ণতার পরিধি অতিক্রম করে কবিতার দুনিয়ায় তিনি বিশ্বনাগরিক। দুঃখী মানুষের মুখ নিরন্তর সঙ্গে রেখে বারবার ফিরে আসতে চেয়েছেন দেশ ও মাটির কাছে। আবার পরিভ্রমণ করেছেন গোটা বিশ্বে। আলোচনায় লেখক রাহুল দাশগুপ্ত ... ...
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। তাঁর কোলাজ-নাট্য আলোড়ন তুলেছিল কলকাতায়। সেই সূত্রেই তাঁর সঙ্গে পরিচয়। পরবর্তী চার দশক জুড়ে রয়েছে এক সৃষ্টিমোহিত সম্পর্ক। স্মৃতিচারণে তরজমাকার রাজা মুখোপাধ্যায় ... ...
জেম্স র্যান্ডি। প্রয়াত হলেন সম্প্রতি। পেশায় দুরন্ত জাদুকর, ম্যাজিশিয়ান। হুডিনি-র একটি রেকর্ড ভেঙেছিলেন। কিন্তু নেশায় ও মননে ছিলেন জ্যোতিষী, সাইকিক ইত্যাকার অলৌকিক শক্তির দাবিদারদের বুজরুকি ফাঁস করে দেওয়ার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। এরিক ফন দানিকেন থেকে উরি গেলার পর্যন্ত বহু বুজরুকের মুখোশ খুলে দিয়ে লিখেছেন একাধিক বই। সেগুলির মধ্যে একটি বিখ্যাত বইয়ের নাম—ফ্লিম-ফ্ল্যাম! পড়লেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান পরিষদের সচিব, পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ... ...
কবি পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল। প্রয়াত হলেন সম্প্রতি। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলা কবিতাকে বাংলা কবিতার দিকে ফিরিয়ে আনার কাজের তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ। দৈবশক্তি ও গুহ্যবিদ্যার প্রতি কবির দুর্মর টানের সঙ্গে তাঁর সকল পাঠক পরিচিত। তেমনই আবার সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে উদ্দীপ্ত তাঁর লেখনী নিরন্তর লিখে গিয়েছে ‘রাজনৈতিক’ কবিতা, জীবনের অন্তিম লগ্ন পর্যন্ত। আগামী দিনে পাঠকের উন্মোচনের জন্য বহুস্তরে তাঁর চিন্তাসূত্র সযত্নে রেখে গেছেন নিজের রচনার ভাঁজে-ভাঁজে। লিখছেন কবি গৌতম বসু। ... ...
সম্প্রতি পূর্ণ হল বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মের শতবর্শ। এ মুহূর্তে তাঁর কবিতা ফিরে পড়তে গিয়ে আমরা দেখি নিরন্তর ভালোবাসার, স্নেহের, এক নির্ঝর যেন জ্বালাপ্রান্তর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। এই দেশ থেকে, যে দেশ কখনও বিশ্লিষ্ট নয় দেশের মানুষ আর মানুষের সময় থেকে, তার সঙ্গে হাড়ে-মজ্জায় শিরায় বিজড়িত রয়ে গিয়েছেন এই কবি। লিখছেন জয়া মিত্র ... ...
কোভিড-এর আক্রমণে সবই যখন সামাজিক দূরত্বের বিধানে অসম্বদ্ধ হয়ে পড়েছে, তখনই একদিন অনেকদিন পর হঠাৎ মনে পড়ল, ফাদার রোবের্জ-এর খোঁজ পাইনি অনেকদিন। ফোনে বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানলাম, উনি দীর্ঘদিন অসুস্থ, ঘরবন্দি! তারপর বুধবার সকালে (২৬ অগাস্ট, ২০২০) মৃত্যুসংবাদ! ... ...
কুররাতুলায়েন হায়দার। স্বাধীনতা-পরবর্তী জমানায় উর্দু সাহিত্যের বহুধাপ্রবাহিত আধুনিক ধারার একটি বিশেষ স্রোতের অন্যতম পথিকৃৎ—যা প্রবাহিত মূলত মনের বিচিত্র উপত্যকা দিয়ে। বহুবর্ণময় তাঁর সাহিত্যের চরিত্রগুলি—এদেশের, বিদেশের, নানা জাতের, নানা শ্রেণির, নানা ভাষার। তেমনই কথাসাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় ছিল তাঁর অবাধ গতায়াত— উপন্যাস, ছোটোগল্প, নাটক, ভ্রমণকহিনি। সমসাময়িক অন্যান্য উর্দু সাহিত্যিকের থেকে তাঁর দরিয়ার প্রবাহ ভিন্নতর। আলোচনায় লেখক ও উর্দু থেকে বাংলা ভাষায় সাহিত্য-তরজমাকার সঞ্চারী সেন। ... ...
সম্প্রতি প্রয়াত হলেন বিজয়া মুখোপাধ্যায়, কবি, গদ্যকার, সংস্কৃতজ্ঞ। ‘নারীবাদী’ তকমার পাঁচিলে না ঘিরেও বলা যায় তাঁর লেখালেখি নারীবিশ্বের উঠোনে দাঁড়িয়েই। লিখছেন কবি চৈতালী চট্টোপাধ্যায় ... ...
পেদ্রো পারামোর দেশ থেকে আলো আসে, যদি তারে নাই চিনি, আমার সদর পুরো খুলবে না আর! অচিন ডানায় মেলা প্রেমের আহার, নেশা, রণের আহার তুমি কাছে টেনে নাও, শিস দাও মধ্যরাতে মেধার মাতাল, অপরিচয়ের ক্ষতে আলিঙ্গন রাখো, ... ...
কিন্তু আমার যাদবপুরে এম.এ. পড়তে আসাই হত না যদি না সেই গ্রীষ্মশেষের বিকেলে, কফিহাউসে গিয়ে টেবিল দখলের আগে, প্রেসিডেন্সির সিড়ির তলায় অপেক্ষারত প্রদ্যুম্ন ও আমার কাছে রীতিমত উদয় হয়ে, মানব বার্তা দিত, শহরে এক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় বসেছে এবং তাতে তুলনামূলক সাহিত্য নামে এক নূতন বিদ্যা চালু হচ্ছে। আমাদের অনার্সের ফল বেরিয়ে গেছে, আমরা স্নাতকোত্তরের দরজায়। মানব জানাল, সে কলকাতায় বাংলা না পড়ে যাদবপুরে তুলনামূলক সাহিত্য পড়বে। সেই বিভাগের প্রধান, বুদ্ধদেব বসুকে সে চেনে; তিনি তাকে উৎসাহ দিয়েছেন। ... ...